স্বাধীনতার পর তলাবিহীন ঝুাড়ি হিসেবে চিহ্নিত একটি রাষ্ট্র ৫০ বছরের মধ্যে সেই অপবাদ ঘুচিয়ে এখন বিশ্বের সামনে উন্নয়নের রোল মডেল । ২৪ নভেম্বর ২০২১ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ সকল শর্ত পূরন করা বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে  উত্তরণের সুপারিশ  অনুমোদন করে । ফলে নতুন এক মাইলফলকের দ্বারপ্রান্তে দেশ । তবে এজন্য বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হবে ২৪ নভেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত ।

আমরা এই পাঠে যে বিষয় গুলো জানতে চলেছি

উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কততম

LDC

LDC’র পূর্ণরূপ Least Developed Countries, যার বাংলা স্বল্পোন্নত দেশগুলো । স্বল্পোন্নত দেশের ধারণাটি আসে ষাটের দশকে । জাতিসংঘ অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে উন্নয়নশীল ও উন্নত এ দুই শ্রেণীতে বিশ্বের সব দেশকে ভাগ করে । তবে উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে আবার যেসব দেশ তুলনামূলক দূর্বল, তাদের নিয়ে স্বল্পোন্নত দেশের (LCD) তালিকা হয় । ১৮ নভেম্বর ১৯৭১ জাতিসংঘের এক প্রস্তাবের মাধ্যমে LDC গ্রুপ গড়ে উঠে । ১৯৭১ সালে প্রথম ২৫ টি স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা তৈরি করা হয় । উল্লেখ্য, স্বল্পোন্নত দেশগুলোও কিন্তু উন্নয়নশীল দেশ । মূলত, এসব দেশ যাতে নিজেদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পারে,সেজন্য উন্নত দেশের পক্ষ থেকে উন্নয়নমীল দেশগুলোকে কিছু বাজার সুবিধা দেওয়া হয় । এর মধ্যে অন্যতম শুল্কমুক্ত পণ্য রপ্তানির সুবিধা । সর্বশেষ ২০১২ সালে LDC -তে যুক্ত হয়ে দক্ষিণ সুদান । বর্তমানে বিশ্বের ৪৬টি স্বল্পোন্নত দেশ রয়েছে ।

 মধ্যম আয়ের দেশ বাংলাদেশ সমস্যা ও সম্ভাবনা

LDC-তে বাংলাদেশ

১৯৭৩ সালে থেকে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য দর-কষাকষি শুরু করে । সেই সময়ে স্বল্পোন্নত দেশের যে সংজ্ঞা ছিল তাতে ১ কোটির বেশি জনসংখ্যার দেশ অন্তর্ভুক্ত হবে না । পরবর্তীতে এটা দুই কোটি করা হয় । ফলে এত বড় জনসংখ্যার দেশকে নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকেরেই আপত্তি ছিল । বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক নুরুল ইসলাম খুব জোরালোভাবে বাংলাদেশের হয়ে দর-কষাকষিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন । তার একান্ত প্রচেষ্টায় ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় যুক্ত হয় ।

মধ্যম আয়ের দেশ বাংলাদেশ সমস্যা ও সম্ভাবনা

বাংলাদেশের উত্তরণ

১৯৭৫ সালের এপ্রিল থেখে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে থাকা বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে সব শর্ত পূরন করে ২০১৮ সালে । এরপর ১২-১৬ মার্চ ২০১৮ জাতিসংঘের উন্নযন নীতি কমিটির ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে মানদণ্ড পূরণের স্বীকৃতি পায় । জাতিসংঘের তিনটি শর্তই পূরন উন্নযনশীল দেশের যোগ্যতা অর্জন যেন এক বিরল ঘটনা । এরপর ২২-২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ CDP’র ত্রি- বার্ষিক পর্যালোচনায় বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নযনশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুুপারিশ লাভ করে । বাংলাদেশের ২০২৪ সালে উন্নয়নশীল দেশে পর্দাপণ করার কথা ছিল । কিন্তু করোনার প্রভাব মোকাবিলা করে প্রস্তুতি নিতে বাংলাদেশ ১৫ জানুয়ারী ২০২১ বাড়তি দুই বছর সময় চেয়ে আবেদন করে । তাই বাংলাদেশ দুই বছরসহ মোট পাঁচ বছরের ‍প্রস্তুতিকালীন সময় পায় । সর্বশেষ ২৪ নভেম্বর ২০২১ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ (UNGA)’র ৭৬তম বৈঠকের ৪০তম প্লেনারি সভা বাংলাদেশের উত্তরণের সুপারিশ অনুমোদন করে ।মধ্যম আয়ের দেশ বাংলাদেশ সমস্যা ও সম্ভাবনা

LDC থেকে উত্তরণ ঘটানো ৬ দেশ

                                                        উত্তরণের পথে যত দেশ

                            LCD-তে অন্তর্ভুক্ত ও উত্তরণের সূচক (২০২১ সালের মানদন্ড)

এছাড়া একটি দেশ যেকোনো দুটি সূচক অর্জন করতে পারলে, সেটি LDC থেকে উত্তরণ ঘটানোর যোগ্যতা অর্জন করে  । তবে ইচ্ছা করলে কোনো দেশ শুধু মাথাপিছু মোট জাতীয় আয়ের ভিত্তিতেও  LDC থেকে বেরিয়ে আসার অবেদন করতে পারে । সেক্ষেত্রে ঐ দেশটির মাথাপিছু জাতীয় আয় মূল্যায়নের বছরে নির্ধানিত প্রয়োজনয়ি আয়ের দ্বিগুণ, অর্থাৎ ২,৪৪৪ মার্কিন ডলার বা তার চেয়ে বেশি হতে হবে ।মধ্যম আয়ের দেশ বাংলাদেশ সমস্যা ও সম্ভাবনাGNI হলো বিগত তিন বছরের গড় মাথাপিছু আয় । CDP ৩টি সূচকের ভিত্তিতে LDC’র তালিকা তৈরি  করে–

মাথাপিছু মোট জাতীয় আয় (GNI), মানব সম্পদ সূচক (HAI) ও আর্থিক ভঙ্গুরতা সূচক (EVI) ।মধ্যম আয়ের দেশ বাংলাদেশ সমস্যা ও সম্ভাবনা